তাকফিরে সতর্কতা: ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা
ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা
তাকফির (কাউকে কাফির ঘোষণা করা) একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরঞ্জন বা অবহেলা উভয়ই ইসলামের মূল শিক্ষার বিপরীতে। তাই কোনো ব্যক্তিকে কাফির বা ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছে বলে রায় দেওয়ার আগে শরিয়ত আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি নিজামুদ্দিন অনুসারী ও জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং তার ফলে চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক পক্ষকে ডালাওভাবে কাফির ঘোষণা করা চরম মাত্রার বাড়াবাড়ি। ইসলাম কখনো এই ধরনের অবস্থান সমর্থন করে না।
তাকফিরের শর্ত এবং সতর্কতা
ইসলামে কাউকে তাকফির করার জন্য কিছু শর্ত ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন:
- অকাট্য প্রমাণ: শুধুমাত্র সুস্পষ্ট ও নিশ্চিত দলিল প্রমাণ থাকলেই তাকফির করা যায়।
- ইচ্ছাকৃততা ও সচেতনতা: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গুনাহ বা কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ইসলামের মূল আকীদা পরিপন্থী কিনা, তা যাচাই করা জরুরি।
- অজুহাত ও ভুল বুঝাবুঝি: ভুল বা অজ্ঞতার কারণে কারো কুফরি কাজ করলে তাকে কাফির ঘোষণা করা যাবে না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
“গুনাহ ও নাফরমানির ভিত্তিতে মুসলিমদের তাকফির করা থেকে সাবধান থাকা জরুরি। কারণ, এটিই ইসলামের ইতিহাসে দেখা দেওয়া সর্বপ্রথম বিদআত।”
(মাজমুউল ফাতাওয়া, ১৩/৩১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যদি কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফির বলে, তবে এই তাকফির তাদের দু’জনের মধ্যে একজনের ওপর বর্তাবে।” (সহীহ মুসলিম: ২২৪)
ইসলামে মধ্যপন্থার গুরুত্ব
ইসলাম চায় তার অনুসারীরা সব সময় ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করুক। বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা এসেছে বহু কুরআন ও হাদিসে। একে অপরকে কাফির বলা বা তাকফিরের মতো গুরুতর বিষয়ে অবহেলা করা শুধু দুনিয়ার ক্ষতির কারণ নয়, আখিরাতেও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
আমাদের করণীয়
- গুনাহ বা ভুলের কারণে কাউকে তাড়াহুড়ো করে কাফির বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- দ্বীনের মধ্যে ইফরাত ও তাফরিতের পথ পরিহার করে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
- সুস্পষ্ট দলিল ছাড়া কাউকে ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছে বলে রায় দেওয়া যাবে না।
- তাকফিরের ক্ষেত্রে ইসলামি স্কলারদের পরামর্শ ও ফতোয়ার ওপর নির্ভর করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আকীদা লালন করার তাওফীক দিন এবং বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।