তাবলিগ জামাত: সমালোচনা ও সার্থকতার দৃষ্টিকোণ
তাবলিগের সাফল্য, বর্তমান বিতর্ক ও এর পেছনের ষড়যন্ত্র: দ্বীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।
তাবলিগ জামাত: সমালোচনা ও সার্থকতার দৃষ্টিকোণ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
তাবলিগ জামাত, যেটি অনেকের জীবনে দ্বীনদারির হাতেখড়ি হিসাবে কাজ করেছে, বর্তমানে সমালোচনার মুখোমুখি। এটি কোনো নতুন বিষয় নয় যে, সময়ের সাথে সাথে যেকোনো আন্দোলন বা প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন উঠে। তবে, তাবলিগের প্রভাব এবং এর সার্থকতা অস্বীকার করা যায় না।
তাবলিগের সাফল্যের গল্প
তাবলিগের কার্যক্রম একপ্রকার মক্তবের উস্তাদের মতো, যিনি তার ছাত্রকে ছোটবেলায় আলিফ-বা-তা-ছা শিখিয়েছেন। সেই ছাত্র বড় হয়ে মুফতি বা আলেম হয়েছেন এবং তার উস্তাদের ভুলত্রুটি তুলে ধরছেন। এটি উস্তাদের জন্য গর্বের বিষয়।
এভাবে, তাবলিগের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ দ্বীনদারির সূচনা পেয়েছেন। অনেক বাবা তাবলিগে অংশগ্রহণ করে দ্বীনের বুনিয়াদি শিক্ষা পেয়ে তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন। এভাবেই তাবলিগ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এক বিপ্লব এনেছে।
তাবলিগ নিরবে কাজ করেছে এবং বিতর্ক কিংবা রাজনীতিতে কখনো জড়ায়নি। এই হিকমাহর কারণে এটি দেশে-বিদেশে সব স্তরের মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা আগে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা থেকেও দূরে ছিলেন, তারা তাবলিগের উছিলায় দ্বীনদার হয়েছেন। ইউরোপ এবং আমেরিকার হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন এই আন্দোলনের মাধ্যমে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
আজকের তাবলিগ বিতর্ক এবং বিভাজনের সম্মুখীন হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, তারা সঠিক পথে ছিল এবং এজন্যই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। তাবলিগের কাজ যদি মানুষকে দ্বীনদার করা হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতেই পারে। কারণ ইসলামের সত্য পথে চলার সাথে সাথে শয়তানি প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়া স্বাভাবিক।
তাবলিগের ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা যায়। কারণ এটি মানুষ দ্বারা পরিচালিত হয়। ভুল করা মানুষের স্বভাবসুলভ। তাবলিগে প্রফেসর থেকে শুরু করে কৃষক পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের মানুষ কাজ করেন। তাই কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রফেসর হয়তো কখনো ইজতেমাকে দ্বিতীয় হজ্ব বলবেন না, কিন্তু একজন কৃষক বা দিনমজুর হয়তো অজ্ঞতাবশত এমন ভুল করতে পারেন। এটি তাবলিগের ব্যর্থতা নয়, বরং এটি সংশোধনের একটি সুযোগ।
প্রস্তাবনা
১. ভুলত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ:
- তাবলিগের ভুলগুলো চিহ্নিত করে তা সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
২. সমালোচনা নয়, সংস্কার:
- গঠনমূলক সমালোচনা এবং পরামর্শের মাধ্যমে তাবলিগকে আরো কার্যকর করা সম্ভব।
৩. ঐক্যের প্রচেষ্টা:
- তাবলিগের ভেতরে বিভেদ দূর করতে আলেম ও মুরুব্বিদের আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে।
উপসংহার
তাবলিগ জামাত একটি অনন্য কার্যক্রম, যা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে দ্বীনের আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি আন্দোলন নয়, বরং এটি একটি শিক্ষা পদ্ধতি।
তাই, যারা তাবলিগের সমালোচনা করেন, তাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সংস্কার এবং সহায়তা। তাবলিগের ভূমিকা অস্বীকার না করে, এটি আরও এগিয়ে নিতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আসুন, আমরা দ্বীনের এই মহতী প্রচেষ্টাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সবাই মিলে কাজ করি।
ওয়াসসালাম।