নবীজী (সঃ) এর হাদিসের মাফহুমঃ "মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে যা কিছু শুনে সেটা যাচাই না করে বর্ণনা করে।"

ভিডিও লাইব্রেরীনথিপ্রবন্ধবর্তমান ফিতনা

স্বীকৃতি ধুয়ে খাও – মুহিব খানের কবিতার বিশ্লেষণ | ইসলামী ঐক্য ও সামাজিক বাস্তবতা

মুহিব খানের জাগরণমূলক কবিতা "স্বীকৃতি ধুয়ে খাও!" আমাদের সমাজ, রাজনীতি, এবং ইসলামী আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গভীর ভাবনা প্রকাশ করে। পড়ুন কবিতার বিশ্লেষণ।

স্বীকৃতি ধুয়ে খাও! একটি কবিতার ভাষ্যে আমাদের সমাজ, রাজনীতি এবং বাস্তবতা

আজকের আলোচ্য বিষয় হলো, “স্বীকৃতি ধুয়ে খাও!”—মুহিব খানের একটি জাগরণমূলক কবিতা। এই কবিতাটি পাঠ করলে মনে হয় যেন এটি আমাদের সমাজের চলমান অবস্থা, রাজনৈতিক চিত্র, এবং ইসলামী আন্দোলনের বাস্তবতাগুলোকে একটি আয়নার মতো তুলে ধরেছে।

কবিতার সারাংশ এবং ভাবনা

কবিতার শুরুতেই কবি অতীতের নিজস্ব অবস্থান এবং বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। একসময় তিনি হয়তো মনে করতেন, কবিরা সত্যের পথে কম এবং ভণ্ডামির পথে বেশি ঝোঁকে। কিন্তু বাস্তবতার আঘাত তাকে এই ভুল ধারণা থেকে মুক্ত করেছে। কবি স্পষ্টভাবে বলেছেন:

“যার লাগি চুরি করি,
সেই বলে চোর!”

এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বজনদের দ্বিমুখী চরিত্র এবং দ্বিচারিতার দিকেই ইঙ্গিত করে। যে সমাজ বা আন্দোলনের জন্য আমরা নিজেদের উজাড় করে দিই, সেখান থেকেই কখনও কখনও আমরা অপমানিত বা বঞ্চিত হই।

শাপলা চত্বর এবং ইসলামী রাজনীতির হতাশা

কবি “শাপলা ও পল্টন” কে শুধুমাত্র একটি স্মৃতি বলে উল্লেখ করেছেন। এটি স্পষ্টতই বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির একটি বড় অধ্যায় এবং সেখানে ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। কবিতার এই অংশে কবি ইঙ্গিত করেছেন ইসলামী শক্তির মৃতপ্রায় অবস্থাকে:

“ইসলামী শক্তির
মৃত রাজনীতি।”

হেফাজত ও বেফাকের সমালোচনা

কবিতায় হেফাজতে ‘নাজাসত’ এবং বেফাকে ‘নেফাক’ এই দুটি বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটি স্পষ্টতই এই দুটি সংগঠনের দ্বিমুখী আচরণ এবং অকার্যকর নেতৃত্বের প্রতি কঠোর সমালোচনা। কবি মনে করেন, তাদের কার্যকলাপ শুধু মুসলিম ঐক্যের ক্ষতি করছে না, বরং সাধারণ মানুষকেও বিভ্রান্ত করছে।

“পঁচে গেছে মূল”—কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট

কবি কওমি শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর নেতৃত্বের সমস্যাগুলোকেও তির্যকভাবে তুলে ধরেছেন। “কওমি বাগানে আর ফুটবে না ফুল, পানি ঢেলে লাভ নেই, পঁচে গেছে মূল”—এই কথাগুলি কওমি নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং অদূরদর্শিতার প্রতি ইঙ্গিতবহ।

কবিতার বার্তা এবং সমাপ্তি

শেষে কবি একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন—স্বীকৃতি, পদ বা প্রভাবের পেছনে ছুটে লাভ নেই। এসব মিথ্যা মোহ ত্যাগ করে, কেবল আল্লাহর নাম জপাই আমাদের মুক্তি।

“স্বীকৃতি ধুয়ে খাও!
জপ ‘তার’ নাম!”

সমাজের জন্য বার্তা

এই কবিতা শুধুমাত্র কবির অভিজ্ঞতার কথা বলে না, এটি আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরের জন্য একটি বার্তা। এটি আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। কবি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সত্য এবং ন্যায় বিচারের পথে থাকাই একমাত্র মুক্তির পথ।

শেষ কথা

“স্বীকৃতি ধুয়ে খাও!” শুধু একটি কবিতা নয়; এটি আমাদের সমাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের একটি বাস্তব প্রতিচ্ছবি। কবি মুহিব খানের এ কবিতা আমাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

আসুন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সকল প্রকার ফিতনা ও বিভ্রান্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করি। আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন। আমীন।

Show More

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button