ইসলামের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান
আল্লাহর নির্দেশ মানার প্রতি গুরুত্ব
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন:
“তোমরা আল্লাহকে মান, তাঁর রাসূলকে মান এবং তোমাদের আমিরকে মান্য কর।” (সূরা নিসা: ৫৯)
এই হুকুমের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুসরণ এবং আমির তথা নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের অপরিহার্যতা স্পষ্ট। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই আয়াতের বাস্তব চিত্র দেখলে আফসোস হয়। কিছু লোক এমন আচরণ করেছে যা সরাসরি এই আয়াত অমান্য করার শামিল।
আয়াতের অবমাননার তিনটি গুরুতর উদাহরণ
১. আমিরকে অস্বীকার ও মিথ্যা অপবাদ
নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। কিন্তু কিছু মানুষ আমিরদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে এই নির্দেশ অমান্য করছে। এতে তারা নিজেদের ঈমানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
২. জাল হাদিস প্রচারের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ)-কে অপবাদ
আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর নামে মিথ্যা রচনা করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলের (সাঃ) নাম ব্যবহার করে বলা হয়, তিনি নাকি প্রথমে দাওয়াত দিতেন এবং না মানলে পাছায় লাঠি দিয়ে শাস্তি দিতেন। এটি স্পষ্টতই জাল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণা।
মিথ্যা ও বেয়াদবি: জুবায়েরপন্থী হেফাজত অনুসারীদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য
https://youtu.be/FGmtmxtiHYo
৩. আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ
এই অপবাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখা যায়, কিছু লোক আল্লাহ তাআলার দিকেও মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, “আল্লাহ নাকি কিছু আলেমকে ভয় পান।” নাউজুবিল্লাহ! এটি সরাসরি কুফর এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বে আঘাত করার শামিল।
ইতিহাসের শিক্ষা: আলেমদের পরীক্ষা
ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখি, প্রকৃত হকপন্থী আলেমদের যেমন সম্মানিত করা হয়েছে, তেমনি উলামায়ে সু’ (দুর্নীতিগ্রস্ত আলেম) ও তাদের সমর্থকদের ঘৃণা করা হয়েছে।
- সালাউদ্দিন আইয়ুবী (রহঃ) তাঁর সময়ে ৩০,০০০ ভণ্ড আলেমকে নির্মূল করেছিলেন, যারা ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
- দাজ্জালের সফরসঙ্গী হবে ৭০,০০০ ভণ্ড আলেম, যারা ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত থেকে নষ্ট করবে।
- ইয়াজিদের বাহিনীতে ছিল ৩,০০০ আলেম ও ৬,০০০ হাফেজ, যারা নবীজীর (সাঃ) দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাঃ)-কে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
ইতিহাসের এই ঘটনাগুলো আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, ভণ্ড আলেমদের থেকে নিজের ঈমান রক্ষা করা ফরজ।
উলামায়ে হক ও উলামায়ে সু’ এর মধ্যে পার্থক্য
উলামায়ে হক বা সত্যিকারের আলেমদের প্রতি আমাদের সম্মান অবশ্যই থাকতে হবে। তারা ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে মুক্ত থাকেন। অপরদিকে, উলামায়ে সু’ হলো সেইসব লোক যারা ইসলামকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
আমাদের করণীয়
১. হকপন্থী আলেমদের প্রতি সম্মান দেখানো:
যারা কুরআন-সুন্নাহ মেনে চলে, তাদেরকে সহযোগিতা করা এবং তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
২. উলামায়ে সু’ থেকে দূরে থাকা:
যেসব আলেম ইসলামের নামে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাদেরকে ঘৃণা করা এবং তাঁদের প্রভাব থেকে নিজেদের ঈমান রক্ষা করা।
৩. তাফসীর ও হাদিসের সঠিক জ্ঞান অর্জন:
যেন আমরা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারি এবং বিভ্রান্তি এড়াতে পারি।
উপসংহার
ইসলাম আমাদের চূড়ান্ত সত্য এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনের দিশা দিয়েছে। কুরআনের নির্দেশনা এবং নবিজীর (সাঃ) আদর্শ মেনে চলাই আমাদের পরিত্রাণের পথ। আল্লাহর আদেশ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ এবং হকপন্থী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যই আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সত্যিকারের ঈমানদার এবং সঠিকপন্থী আলেমদের অনুসারী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক:
তাহকীক অনলাইন টিমtahqiq.online