মুফতী আবুল কাসেম নোমানী: মোদি সরকারের সম্মাননা ও বিতর্ক
মুফতী আবুল কাসেম নোমানী মোদি সরকারের কাছ থেকে সামরিক সম্মাননা পাওয়ার পর মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেওবন্দের মর্যাদা কি ক্ষুণ্ন হলো?

মুফতী আবুল কাসেম নোমানী: মোদি সরকারের সম্মাননা ও বিতর্ক
দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামীম মুফতী আবুল কাসেম নোমানীকে ভারতের সেনা প্রধান সামরিক সম্মাননা প্রদান করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দেওবন্দ অনুসারী আলেমদের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল ও আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, মুফতী নোমানী ভারত সরকার থেকে এমন সম্মাননা পাওয়ার যথাযথ হকদার।
মোদি সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা
হ্যাঁ, মুফতী আবুল কাসেম নোমানী মোদি সরকারের অনুকূল্য ও সম্মাননা পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি। এমন একটি সময়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান সরাসরি দারুল উলুম দেওবন্দ গিয়ে তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন, যখন ভারতজুড়ে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন চরম পর্যায়ে। কট্টরপন্থী হিন্দু বিজেপি সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মুসলিম নিধন অব্যাহত রয়েছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরে ভারতের ১২টি প্রদেশে ৪৪ জন মুসলমান কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন। আসামের লক্ষ লক্ষ মুসলিমের নাগরিকত্ব বাতিল করে তাদের রোহিঙ্গাদের মতো দেশছাড়া করতে মোদি সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
মুসলমানদের নীরবতা ও প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
যখন ভারতের মুসলমানরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছে, তখন দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতী নোমানী মোদি সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছেন।
- তিন তালাক বিল নিয়ে ভারতের অন্যান্য মুসলিম নেতারা সোচ্চার হলেও, মুফতী নোমানী মোদি সরকারের প্রশংসা করেছেন।
- আসামের মুসলমানদের নাগরিকত্ব সংকট নিয়ে যখন দারুল উলুম দেওবন্দের শূরা সদস্য মাওলানা বদরুদ্দীন আজমল আন্দোলন করছেন, তখন মুফতী নোমানী চুপ ছিলেন।
- ভারতীয় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সুভাষ শেরন তাকে সম্মাননা দেওয়ার দিনেও দিল্লির পার্লামেন্টে আসাদুদ্দীন ওয়াইসি বিজেপি সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের মর্যাদা হ্রাস
প্রথমদিকে প্রচার করা হয়েছিল, এই সম্মাননা দারুল উলুম দেওবন্দের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের স্বীকৃতি। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই পদক দেওবন্দকে দেওয়া হয়নি, বরং মুফতী আবুল কাসেম নোমানী ব্যক্তিগতভাবে পেয়েছেন।
এছাড়াও, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর সাথে তার সম্পর্কের গুঞ্জন দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সৌদি যুবরাজ সালমানের প্রশংসায় তিনি সর্বদা মুখর থাকেন, যা দেওবন্দের ঐতিহ্যবাহী নীতির পরিপন্থী।
দেওবন্দের প্রকৃত পরিচয়
এজন্যই ভারতের শীর্ষ আলেম সাইয়্যিদ সুলায়মান নদভী বলেছেন:
“তাগুতের গোলামে তাঁরা পরিণত হয়েছেন। বাদশাহ সালমান ও আমেরিকার চাটুকারিতা করে দেওবন্দের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে তারা সরে গেছেন।”
বর্তমানে দেওবন্দের দুইটি শাখা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে:
- সরকারি দেওবন্দ – যেটি মুফতী নোমানী পরিচালিত এবং মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ।
- হাকীকী দেওবন্দ – যা আকাবিরদের মিশনকে বহন করে চলেছে।
উম্মাহর সামনে করণীয়
আজ যদি মোদি সরকার কোনো মুসলিম চিন্তাবিদ বা নেতা, যারা তাদের বিপক্ষে কথা বলেন, তাদের এই পদক দিত, তাহলে তথাকথিত দেওবন্দি অনুসারীরা সেটিকে ‘মোদির দালালি’ বলে প্রচার করতেন। কিন্তু এখন তারা অন্ধ আনুগত্যের কারণে চুপ।
এ কারণেই পাকিস্তানের মাওলানা তারিক জামিল বলেছেন:
“ভাই, দেওবন্দি না বনো, উম্মত বনো।”
ভারতীয় মুসলমানদের কঠিন পরিস্থিতিতে, উম্মাহর গভীর সংকটের মুহূর্তে, কতোটা আত্মসমর্পণ করলে মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ সেনাপ্রধান একজন শীর্ষ মুসলিম নেতাকে এই সম্মাননা দিতে পারেন, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।
উপসংহার
আমাদের আকাবিররা দারুল উলুম দেওবন্দকে যখন ভারত সরকার থেকে সম্মাননা বা সহযোগিতা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, তখন ঈমানী চেতনায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আজ সেই দেওবন্দের নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন, তারা মুসলিম হত্যাকারী মোদি সরকারের কাছ থেকে সম্মাননা নিচ্ছেন এবং গর্বের সাথে তা প্রচার করছেন।
আল্লাহ আমাদের উম্মাহকে এসব দুনিয়াদার আলেম ও তাগুতের চাটুকার উলামাদের প্রভাব থেকে রক্ষা করুন।
(সংগ্রহীত)