কিয়ামতের আগে মসজিদগুলো সুসজ্জিত হবে, কিন্তু হেদায়েত সেখানে খালি থাকবে – একটি গভীর পর্যবেক্ষণ
মসজিদের প্রকৃত ভূমিকা ও বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে ফারাক: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি হাদিসে সতর্ক করেছেন যে, “কিয়ামতের আগে মসজিদগুলো সুসজ্জিত হবে, কিন্তু সেখানে হেদায়েত খালি থাকবে।” (মুসনাদে আহমদ)
আজ আমরা লক্ষ্য করছি, সেই ভবিষ্যদ্বাণী ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। মসজিদের উন্নয়নের নামে কতোটা ব্যতিক্রমী কার্যকলাপ হচ্ছে, সেটি এক গভীর চিন্তার বিষয়।
মসজিদের প্রকৃত ভূমিকা:
ইসলামের ইতিহাসে মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়। এটি ছিল মানুষের আশ্রয়স্থল, শিক্ষা কেন্দ্র এবং সামাজিক বিচারের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মসজিদে দারিদ্র্যপীড়িত সাহাবারা আশ্রয় নিতেন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা কি সেই মডেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
বাড়াবাড়ির ফলাফল:
আজকাল আমরা দেখি, মসজিদ উন্নয়নের নামে বিলাসবহুল জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে। দামি টাইলস, এসি, কার্পেট ইত্যাদিতে মসজিদ সজ্জিত করা হচ্ছে। অথচ, একই সঙ্গে এই বিলাসিতা দরিদ্র মুসল্লিদের জন্য একটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
- গরিবের প্রবেশাধিকার:
আগে যেখানে মসজিদ সারাদিন খোলা থাকত, এখন বেশিরভাগ মসজিদ তালাবদ্ধ থাকে। নামাজ ছাড়া অন্য সময় মুসল্লিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। গরিব মানুষ মসজিদে এসে সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগও হারাচ্ছে। - মুসল্লিদের প্রতি অবহেলা:
অনেক সময় মসজিদের বিলাসী পরিবেশ দরিদ্র মুসল্লিদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তারা মনে করে, মসজিদ যেন তাদের জন্য নয়।
মসজিদ কমিটির ভূমিকা:
বর্তমান অনেক মসজিদ কমিটিতে এমন ব্যক্তিরা জায়গা পেয়েছেন, যারা ইসলামের মূলনীতির সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত। সুদখোর, ঘুষখোর, এবং ক্ষমতালোভীরা মসজিদের কমিটি দখল করে রেখেছেন।
- ক্ষমতার প্রতিযোগিতা:
মসজিদের দায়িত্ব একসময় আমানত হিসেবে গণ্য করা হতো। এখন এটি ক্ষমতা এবং দখলের একটি প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে।
ইসলামের শিক্ষা এবং রাসূল (সা.) এর আদর্শ:
রাসূল (সা.) এবং সাহাবাদের সময়ে মসজিদ একটি উন্মুক্ত স্থান ছিল। যেখানে ধনী-গরিব সবাই সমানভাবে উপকৃত হতো। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য।” (সূরা জিন: ১৮)
এটি বোঝা যায় যে মসজিদ কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের জন্য নয়। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।
সমাধান:
আমরা মসজিদগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং ভূমিকা পুনরুদ্ধার করতে পারি যদি:
- মসজিদের উন্নয়ন কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখা যায়।
- গরিব ও সাধারণ মুসল্লিদের জন্য মসজিদে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়।
- কমিটির নেতৃত্বে এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়, যারা ইসলামী নীতিমালার প্রতি বিশ্বস্ত।
- মসজিদের পরিবেশকে শুধুমাত্র জাঁকজমকপূর্ণ না করে একটি হেদায়েতের স্থান হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
উপসংহার:
আজ মসজিদের উন্নয়নের নামে আমরা কি সত্যিই হেদায়েতের পথ খুঁজে পাচ্ছি? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার তৌফিক দান করুন। কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময়ে এই ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ইসলামের প্রকৃত আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি।
তাহকিক টিমের মন্তব্য:
তাহকিকের মাধ্যমে আমরা এসব বিষয় নিয়ে সঠিক এবং গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরতে চাই। আপনার মতামত, প্রশ্ন বা আপত্তি থাকলে আমাদের জানাতে পারেন।
Follow Us:
🌐 Web: https://tahqiq.online/
👍 Facebook Page: https://www.facebook.com/tahqiq.online
📺 YouTube Channel: https://www.youtube.com/@tahqiq.online
👥 Facebook Group: https://www.facebook.com/groups/tahqiq
🔗 Telegram Channel: t.me/tahqiqOnline
Published by:
Tahqiq Online Team
Wassalam.