হযরতজী মাওলানা সাদ সাহেব কেন ইমারতি ছাড়েন না?
ইমারতি ছেড়ে না দেওয়া ও মাওলানা সাদ সাহেবের দাওয়াতের কাজের নীতি: সত্য, তাকওয়া ও নমনীয়তার মিশ্রণে দ্বীনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা।
আবু বকর রাদিঃ বলছেন ওমর রাদিঃ কে ওমর তুমি খিলাফতের দায়িত্ব পালন করো, তবে মনে রেখো তুমি সবাইকে কখনো খুশি রাখতে পারবে না। চিন্তা করে দেখুন, কে বলছেন? আবু বকর রাদিঃ। কাকে বলছেন? ওমর রাদিঃ কে। আল্লাহু আকবার! যার ব্যাপারে স্বয়ং রাসূল সাঃ বলেছেন, “আমার পড়ে কারও নবী হওয়ার সুযোগ থাকলে, ওমর রাদিঃ নবী হয়ে যেত!”
নমনীয়তার অর্থ সত্যকে ছেড়ে দেয়া নয়! আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাদিঃ এর কাছে দাবি করা হয়েছিল, আপনি জিম্মাদারী ছেড়ে দিন। আবদুল্লাহ রাদিঃ বললেন, না আমি কোনভাবেই কুরআন ও সুন্নাহের বহির্ভূত ব্যাপারে নমনীয় হতে রাজি নই। এমনকি তখনও রাজী নই, যখন দাবি পেশ কারীর কাছে পাথরও নরম মনে হয়! আর এটাই জিম্মাদারি আদায় করা! মানুষের এখানেই বুঝতে সমস্যা হয় যে, এটা কি ব্যক্তি আকাঙ্ক্ষা? না দ্বীনের জিম্মাদারি আদায়? সাহাবা রাদিঃ গন প্রচন্ড পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী ছিলেন! বিধায়, তারা শুধুমাত্র রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য লড়াইয়ের মানসিকতা কখনোই রাখতেন না। যারা ক্ষমতা আর সম্পদের আকাঙ্খাই রাখেন না, তারা ঐ ক্ষমতা আর সম্পদের জন্য কি লড়াই করবেন? এখানেই সাথীরা প্রভাবিত হয়ে বলেন, দেখুন উনি তো নিজে আমির থাকতে চায়! যদিও ব্যাপারটা এমন না! কেননা আমির হওয়াই আসল নয়, কাজই মুখ্য। কারণ জিম্মাদারির জন্য কাজ না, কাজের জন্যই বরং জিম্মাদারী। আর এখানেই পার্থক্য। মানুষ চায় এমন ভাবে চলো যেন সবাই খুশি থাকে। অথচ এমন হওয়া সম্ভব না।
সুফিয়ান সাওরী রহঃ বলেন, “যার ব্যাপারে তুমি দেখো যে, সবাই তার ব্যাপারে সন্তুষ্ট, তখন তুমি বুঝে নিও যে, সে দ্বীনের ব্যাপারে হয়তো উদাসীন।”
আমি বুঝাতে চাচ্ছি নমনীয়তার অর্থ কি?
অর্থ হলো আল্লাহ তাআলার দ্বীনের ব্যাপারে ওমর রাদিঃ এর চেয়ে কঠিন আর কেউ নেই! আবার একজন বিধবা নারী ও তার সন্তানদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ওমর রাদিঃ এর চেয়ে নরম মনেরও কেউ ছিলেন না! যে, আটার বস্তা নিজের কাঁধে করে বিধবার বাড়িতে দিয়ে আসবে। কোথায় নরম হতে হবে, আর কোথায় শক্ত হতে হবে, সেটা হল বুঝার বিষয়। ওমর রাদিঃ বলেন, কখনো আমি মাখন এর চেয়েও নমনীয়তা অবলম্বন করি। আবার কখনো পাথরের চেয়েও শক্ত হতে হয়। যখন দেখি আল্লাহর হুকুম, তখন ওই হুকুমের ব্যাপারে আমি আর কারো কথা শুনবো না। নমনীয়তার অর্থ এমন না যে, আপনার কাছে কিছু দাবি করা হলো, আপনি এই কাজটা ছেড়ে দেন বা অমুক ব্যাপারটা মেনে নেন। কারণ এতে আপনি লাভ করছেন।
এটাও জেনে রাখা দরকার, ক্ষমতা আর টাকার ব্যাপারে দাবি দাওয়া থাকে, সমঝোতা থাকে, সঠিক আর ভুলের মধ্যে কোনো সমঝোতা নাই। দাবি দাওয়ার ব্যাপার নাই। ভুলের সাথে সিরাত এর বাইরে কোনো সমঝোতা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর, জমি বা রাষ্ট্রীয় কোনো ঝগড়া-বিবাদ চলছে? সমঝোতা করে নাও! এইসব ক্ষেত্রে সমঝোতা খুব সহজে একজন নিজের দাবি ছেড়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আমাদের আরো মনে রাখা দরকার, হুযুর সাঃ যেন দাওয়াতের কাজ বন্ধ করে দেন, এজন্য তাঁর সামনে অনেক দুনিয়াবী বস্তু পেশ করা হয়েছিল। সম্পদ ক্ষমতা আর নারী পেশ করা হয়। বিনিময়ে দাওয়াতের কাজ যেন হুজুর সাঃ বন্ধ করে দেন। এইজন্য অনেক তোড়জোড়ও করা হয়েছিল। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে দাওয়াত বন্ধ না করার কারণে মক্কার মানুষ তখন নির্যাতন শুরু করলো। যেন হুযুর সাঃ তাঁর অবস্থান থেকে সরে যান। নির্যাতনের সাথে মিথ্যা অভিযোগ দিতে থাকে, যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে হুযুর সাঃ দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দেন। এটা খুব পুরনো পদ্ধতি।
এদিকে আমাদের অনেক সাথীরাই মনে করেন, সুনামের সাথে দাওয়াতের কাজ করবো। এটা ঠিক না।বরং এই কাজটা শুরু থেকেই বদনাম নিয়েই করার কাজ। নবী আলাইহিমুস সালাম দের বদনামের গল্প গুলো পড়ুন, তখন বুঝতে পারবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাওয়াতের কাজ সুনাম নিয়ে কাজ করার কাজ নয়। দাওয়াতের কাজ করলে সব ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হবে। আর এইসব অভিযোগের মধ্যেই আল্লাহতালা তাদেরকে সাহায্য করবেন। যারা তাকওয়াবান হবেন। আল্লাহ তায়ালার সাথে যার সম্পর্ক ঠিক থাকবে। ততোধিক শুকরিয়ার কথা এটা যে, ওইসব অভিযোগগুলো ই দাওয়াতের কাজ করনেওয়ালাকে অনেক উঁচু স্তরের সম্মান এনে দিবে। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু সবাই সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না!
এটাই বুঝার বিষয়, আর এজন্যই এই মেহনত বুঝেশুনে করার মেহনত। “আলা-বাসিরাতিন”জেনে বুঝে চিন্তা ফিকির করে করার মেহনত। কোন আন্দাজ করে করার মেহনত নয়!
আল্লাহতালাই সবাইকে উত্তম বুঝ দান কারি।