নবীজী (সঃ) এর হাদিসের মাফহুমঃ "মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে যা কিছু শুনে সেটা যাচাই না করে বর্ণনা করে।"

ইসলাম ও সত্যপ্রবন্ধরিসোর্স

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন: ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে একটি তাহকিকী পর্যালোচনা

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ৩১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের ইসলামবিরোধী ধারাগুলির কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ। মুসলিম জনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাহকিক, এখনই জানুন।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন: ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে একটি তাহকিকী পর্যালোচনা

বর্তমানে ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ নামে ৩১৮ পৃষ্ঠাব্যাপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী বহু সুপারিশ রাখা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি।

একজন মুসলিম হিসেবে সংক্ষেপে কিছু সাংঘর্ষিক বিষয় পেশ করছি:


১. সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকার

রিপোর্টে বলা হয়েছে: নারী-পুরুষের সম্পত্তিতে সমান অধিকার।
ইসলামের বিধান:

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ
“আল্লাহ তোমাদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান।” (সূরা আন নিসা: ১১)

এটি আল্লাহর সরাসরি আদেশ। এর ব্যতিক্রম চরম ধৃষ্টতা।


২. বহু বিবাহ রোধ বা বিলুপ্তির আহ্বান

রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে: বহু বিবাহ প্রথা বিলুপ্তির।
ইসলামের বিধান:

فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
“তোমাদের পছন্দমতো নারীদের মধ্যে দুই, তিন বা চারজনকে বিবাহ কর।” (সূরা আন নিসা: ৩)

শর্তসাপেক্ষে বহু বিবাহ ইসলাম বৈধ করেছে; এর বিরুদ্ধে কথা বলা শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণ।


৩. “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার”

রিপোর্টে প্রচার: নিজের শরীরের পূর্ণ অধিকার দাবি।
ইসলামের বিধান:

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ
“স্মরণ রেখ, সৃষ্টি ও আদেশ দান একমাত্র তাঁরই কাজ।” (সূরা আল আ’রাফ: ৫৪)

শরীর মানুষের ইচ্ছাধীন নয়, বরং আল্লাহর বিধানের অনুসরণে বাধ্য।


৪. হায়য (মাসিক) বিষয়ে কুরআনিক নির্দেশ অস্বীকার

রিপোর্টে বলা হয়েছে: হায়য সংক্রান্ত ইসলামী আদেশকে কুসংস্কার বলা হয়েছে।
কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশ:

قُلْ هُوَ أَذًى
“বলুন, এটি (হায়য) কষ্টদায়ক।” (সূরা বাকারা: ২২২)

শরয়ী আদেশকে “কুসংস্কার” বলা সরাসরি কুফরির দিকে ধাবিত করতে পারে।


৫. ট্রান্সজেন্ডার প্রচার

রিপোর্টে বলা হয়েছে: জেন্ডার পরিবর্তন/পরিচয়কে স্বীকৃতি দিতে হবে।
ইসলামের বিধান:

وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ
“তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।” (সূরা আন নিসা: ১১৯)

لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
“পুরুষ যারা নারীর অনুকরণ করে এবং নারী যারা পুরুষের অনুকরণ করে, তাদের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন।” (সহীহ বুখারী: ৫৮৮৫)

এগুলি ইবলিসের চক্রান্ত; ইসলামে এর কোনো বৈধতা নেই।


৬. বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার

রিপোর্টে বলা হয়েছে: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকবে বিবাহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদিতে।
কুরআনের দিকনির্দেশনা:

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ
“পুরুষগণ নারীদের অভিভাবক।” (সূরা আন নিসা: ৩৪)

পুরুষের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। সাম্যের নামে দায়িত্ব-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা যাবে না।


৭. দত্তক শিশুকে গর্ভজাত সন্তানের সমান অধিকার

রিপোর্টের দাবি: দত্তক সন্তানকে প্রকৃত সন্তান বলে গণ্য করার প্রস্তাব।
কুরআনের নিষেধাজ্ঞা:

وَمَا جَعَلَ أَدْعِيَاءَكُمْ أَبْنَاءَكُمْ
“আর তোমাদের দত্তক সন্তানদেরকে আল্লাহ তোমাদের প্রকৃত সন্তান করেননি।” (সূরা আহযাব: ৪)

সুতরাং দত্তক সন্তান প্রকৃত উত্তরাধিকারী হতে পারে না।


উপসংহার

এদেশের সংবিধান বলছে- রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডে আল্লাহর প্রতি অঙ্গীকার এবং ইসলামী মূল্যবোধ অনুসরণ করা হবে।
অতএব, কোনো প্রস্তাব বা আইনি সুপারিশ যদি কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী হয়, তা রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।

আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দিন।
আল্লাহুম্মা আমীন।


(নিচে চাইলে ব্যবহারযোগ্য একটি সুন্দর দুআ সংযুক্ত করছি)

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
“হে আমাদের রব! আপনি যখন আমাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন, তখন আমাদের অন্তরগুলোকে বিভ্রান্ত করে দিয়েন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি অতিশয় দাতা।” (সূরা আলে ইমরান: ৮)


Show More

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button