নবীজী (সঃ) এর হাদিসের মাফহুমঃ "মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে যা কিছু শুনে সেটা যাচাই না করে বর্ণনা করে।"

ইসলামী নির্দেশনা

বদ নজর: এর প্রভাব ও নিরাপত্তার উপায়

বদ নজর থেকে রক্ষা পাওয়ার ইসলামিক উপায় ও দোআ

বদ নজর খুব খারাপ জিনিস

বদ নজরের প্রভাব

বদ নজর বা মন্দ দৃষ্টি একটি বাস্তব ও মারাত্মক বিষয়, যা মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের এই ব্যাপারে সাবধান করেছেন। তিনি বলেছেন:

“বদ নজর মানুষকে কবর এবং উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত নিয়ে যায়!”
(সহীহ আল জামে: শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেন: ১২৪৯)

এই হাদিসটি বদ নজরের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের প্রতি ইঙ্গিত করে। এটি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত কারণ হতে পারে এবং অন্য প্রাণীদেরও ক্ষতি করতে পারে।

বদ নজর থেকে বাঁচার গুরুত্ব

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বদ নজর থেকে সুরক্ষিত থাকা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় কেউ অজান্তে বা হিংসা থেকে অন্যের প্রতি বদ নজর দিতে পারে। এর ফলে মানুষ শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ এবং জীবনে নানা ধরণের বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক করেছেন:

“আমি আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।”
(সূরা ফালাক: ৫)

বদ নজর থেকে বাঁচার দোআ ও উপায়

আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামে বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য অনেক উপায় ও দোআ রয়েছে। এগুলো নিয়মিত পড়লে ইনশা আল্লাহ আমরা বদ নজরের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারি।

১. আয়াতুল কুরসী

প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসী পড়া বদ নজরসহ সব ধরনের অশুভ থেকে রক্ষা করার শক্তিশালী উপায়।

২. সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত এই সূরাগুলো পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সকালে এবং রাতে তিনবার করে এই সূরাগুলো পড়া উচিত।

৩. বদ নজর থেকে রক্ষার বিশেষ দোআ

“আউ'যু বিখালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক”
(আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর মাধ্যমে আশ্রয় চাই, যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।)

এই দোআ রাতে ঘুমানোর আগে এবং দিনে বিপদের সময় পড়া উচিত।

৪. নিজের উপর দোআ করা

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেকে ও পরিবারকে বদ নজর থেকে রক্ষা করার জন্য এই দোআ করতেন:

“উআ'ইযুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি 'আইনিন লাম্মাহ”
(আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ বাণীর মাধ্যমে তোমাদের আশ্রয় দিচ্ছি, প্রত্যেক শয়তান ও ক্ষতিকর জীব থেকে এবং প্রত্যেক ক্ষতিকর বদ নজর থেকে।)

সচেতনতার গুরুত্ব

১. নিজের নিয়ত বিশুদ্ধ রাখা: কখনও কাউকে ঈর্ষা বা হিংসার নজরে দেখবেন না। অন্যের ভালো দেখলে “মাশা আল্লাহ” বলা সুন্নত।
২. নিজের প্রশংসা সাবধানে করা: নিজের বা সন্তানদের প্রশংসা করলে আল্লাহর নাম স্মরণ করুন।
৩. আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা: নিয়মিত ইবাদত ও তাওয়াক্কুল করলে বদ নজরের ক্ষতি কমিয়ে দেয়া সম্ভব।

উপসংহার

বদ নজর বাস্তব এবং এর প্রভাব মারাত্মক। তবে ইসলাম আমাদের সুরক্ষার জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। নিয়মিত দোআ ও কুরআনের আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে আমরা এই ক্ষতি থেকে নিজেদের ও আমাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বদ নজর এবং সব ধরনের অমঙ্গল থেকে হিফাজত করুন। আমিন।

Show More

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button