নবীজী (সঃ) এর হাদিসের মাফহুমঃ "মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে যা কিছু শুনে সেটা যাচাই না করে বর্ণনা করে।"

তাহকিক ওজাহাতি জোরতথ্য যাচাইপ্রকাশিত মিথ্যা

মিথ্যা অপবাদ – ৪ | মাওলানা সাদ সাহেবের উপর ‘আলেমদের বেতন’ নিয়ে আলমী শুরার মিথ্যা অপবাদ | Fact Check | Tahqiq Online

“ইমাম, মুআজ্জিন ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন” নিয়ে মিথ্যা অপবাদ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মাওলানা সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন যে, আলেম উলামাদের জন্য বেতন নেওয়া গলদ, দুনিয়াদারি ও নাজায়েজ। প্রথমে আমরা প্রচারটি শুনে নেই:

(মাওলানা সাদ) বলছে, উলামারা টাকা নিয়ে মাদ্রাসার খেদমত করে, মসজিদের খেদমত করে এগুলা দুনিয়াদারি। তারা আগে বেহেশতে যেতে পারবে না। তাদের আগে বেশ্যারা বেহেশতে যাবে। তো উলামারা বেতন নিয়ে যদি কাজ করে তো এইটা গলদ কাজ, এইটা দুনিয়াদারি এবং তারা আগে বেহেশতে যেতে পারবে না তাদের আগে দেহ ব্যবসায়ীরা, বেশ্যারা আগে বেহেশতে যাবে। বলেন নাউজুবিল্লাহ।

অথচ আমরা যে তালিম দিয়ে বেতন নেই, মাদ্রাসায় পড়ায়া বেতন নেই, মসজিদে ইমামতি করে বেতন নেই- এটা চারো মাযহাবে জায়েজ। চারো মাযহাবে জায়েজ। নবীজি বলতেছেন, এই বিনিময় নেওয়া জায়েজ। হযরত ওমরে ফারুক কোরআনের মোয়াল্লেমদেরকে বেতন দিতেন।

মাওলানা সাদ সাহেবের পরদাদা, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি- আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। তিনি মেওয়াতে অনেক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন মক্তবে। উনি নিজের হাতে তাদের বেতনের ব্যবস্থা করতেন।

তাহলে বেতন দেওয়া নেওয়া যদি নাজায়েজ হয় তো নবীজী কেন বললেন, হযরত ওমরে ফারুক থেকে আজ পর্যন্ত মোয়াল্লেমদেরকে বেতন কেন দেওয়া হলো, ইলিয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি বেতন কেন দিলেন। তো বেতন নাজায়েজ হতে পারে?”

এই প্রচার থেকে আমরা জানলাম যে, মাওলানা সাদ আলেমদের জন্য বেতন নেওয়াকে গলদ, দুনিয়াদারি ও নাজায়েজ বলেছেন। এখন তাহলে এই ব্যাপারে মাওলানা সাদ সাহেবের বক্তব্য শুনি। এখানে তিনি বলেছেনঃ

“যার অর্থের তীব্র প্রয়োজন আছে, আর সে কোরআনের তালিম দেওয়ার জন্য নিজের দুনিয়াবী পারিশ্রমিকে ছেড়ে দেয়, তার জন্য এই সুযোগ আছে যে, সে নিজের সময় দেওয়ার বিনিময় নিয়ে নেয়। কিন্তু এটাকে কুরআনের তালিমের বদলা মনে না করে। এ কথা মনে রাখ যে, ওটা তার সময় দেওয়ার বিনিময়। তালিমের বিনিময় তো আখেরাত ছাড়া আর কিছুই না।

হা, কোরআনের তালিম দাতা, তার উচিত যদি তার জরুরত থাকে আর তার কাছে অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা নাই, তাহলে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাকে যে সময় দিতে হয়েছে, তার বিনিময় নিতে পারে। তালিমের জন্য সময় দেওয়ার বিনিময়, তালিমের বিনিময় নয় বরং সময়ের বিনিময়।

আল্লাহর জন্য পড়াও। আর যদি জীবিকার অনেক প্রয়োজন হয়, তো এটাকে, এই পারিশ্রমিককে কখনো তালিমের বিনিময় মনে করো না বরং এই পারিশ্রমিককে সময় দেওয়ার বিনিময়ে মনে করো। দ্বীনের তালিম ও কোরআনের তালিমের পারিশ্রমিক তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।
হা, যে ব্যক্তি বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য পুরো সময় আলাদা করে দেয়- আমার তো এটা মন চায় যে, এই সাল লাগানো উলামারা আধা দিন ব্যবসা করে, আধা দিন তালিম দেয়। যাতে তারা তালিমে প্রতিদিন মশগুল থাকে। আর তারা যেন প্রতিদিন অর্ধেক সময় কামাই রোজগারে দেয়। যাতে তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে শুধু আখিরাতের জন্য পড়ায়।

এতে কোন সন্দেহ নাই যে, তালিমে সময় দেওয়ার জন্য যারা বিনিময় নিচ্ছে, তারাও আল্লাহর জন্যই পড়াচ্ছে। তাদের এখলাসে কোন সন্দেহ নাই আর তাদের এহতেসাব বা সওয়াবের আশায় কোন ক্ষতি নাই। তারা আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা রেখে নিজের সময়ের বিনিময় নিতে পারে।

নিঃসন্দেহে এমন মুখলিস লোক- যে এটা চায় যে, হা, আমি নিজের কোনো ব্যবস্থা করে নেই আর আল্লাহর জন্যই পড়াই, নিজের জীবিকার কোনো ব্যবস্থা করে নেই- এটা আরো উত্তম কথা।”

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মাওলানা সাদ আলেম-উলামাদের জন্য বেতন নেওয়াকে জায়েজ বলেছেন। শুধু তাই নয় বরং তিনি বলেছেন যে, এই বেতন নেওয়ার কারণে তাদের এখলাসেও কোন কমতি হবে না, তাদের এহতেসাবেও কোন কমতি হবে না, তাদের সাওয়াবের মধ্যেও কোনো কমতি হবে না। তবে কেউ যদি নিজের জীবিকার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা করে বেতন ছাড়াই কোরআনের তালিম দিতে চায়, তাহলে সেটা তার জন্য আরও উত্তম বা আরো পরহেজগারী হবে।


মাওলানা সা’দ সাহেবের আরো একটা বয়ান শুনিঃ

“আর যদি কোন ব্যক্তি তার পুরো সময় এলেম শিক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা করে আর তার জীবন অতিবাহিত করার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা যদি করতে না পারে যে তার কাছে জীবিকার অন্য কোন ব্যবস্থা নাই- তাহলে এটা উত্তম হবে যে, সে তার এলেম শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে সময় দিচ্ছে তার বিনিময় নিয়ে নেয়।
যদি তার প্রয়োজন থাকে, তাহলে নিজের বিনিময়কে তালিমের বিনিময় মনে না করে, বরং এই বিনিময়কে নিজের সময় দেওয়ার বিনিময় মনে করে- যে পুরো সময় ব্যবসাকে ছেড়ে শুধু তালিমের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।

আমাকে সেই সময় দেওয়ার জন্য বিনিময় দেওয়া হয়েছে সেটাও আমার প্রয়োজন থাকার কারণে দেওয়া হয়েছে। যে হযরতগণ এলেম শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিনিময় দেয়, সেটা তালিমের বিনিময় নয় বরং সময়ের বিনিময়।

যেমন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে খিলাফতের খিদমতের বিনিময় নয় বরং তার সময়ের বিনিময় দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসা থেকে সরিয়ে তাকে খিলাফতের কাজে লাগানো হয়েছিল। আর এটা বলা হয়েছিল যে, আমিরুল মুমিনিন, যদি আপনি ব্যবসা করেন খিলাফতের সাথে তাহলে খিলাফতের জন্য আপনি পুরো আলাদা হতে পারবেন না। বরং আপনি ব্যবসা ছেড়ে দেন, আমরা আপনাকে ব্যবসার বিনিময় দিব। এটা ব্যবসার বিনিময়, খিলাফতের বিনিময় নয়।”

এখান থেকেও আমরা বুঝলাম যে, মাওলানা সাদ সাহেব বলেছেন যে, যার জীবিকা নির্বাহের অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকে তার জন্য বেতন নেওয়াটাই উত্তম।
মাওলানা সাদ যে আলেমদের বেতন নেওয়াকে জায়েজ বলেছেন তার আরও একটা প্রমাণ শুনিঃ
কয়েক বছর আগে থেকেই মাওলানা সাদ সাহেবের ফায়সালা হলো, প্রত্যেক মসজিদে মক্তব চালু করা। যেখানে ছোট বাচ্চারা কোরআন শিখবে এবং মক্তবের জন্য ক্বারী বা আলেম নিয়োগ দেওয়া। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, ওই ক্বারী বা আলেমের বেতন কে দিবে? তখন তিনি বললেন যে তাবলীগের কাজ করনেওয়ালা সাথীরাই তার বেতন দিবে। এখান থেকেই প্রমাণ হয় যে, মাওলানা সাদ সাহেব আলেমদের বেতন নেওয়াকে জায়েজ বলেছেন।

আর তার এই ফায়সালা অনুযায়ী পৃথিবীর অনেক মসজিদেই মক্তব চালু হয়েছে এবং মক্তবের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্বারী বা আলেমকে বেতনও দেওয়া হচ্ছে। অথচ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হলো যে, তিনি বলেছেন আলেমদের জন্য বেতন নেওয়া গলদ, দুনিয়াদারি ও নাজায়েজ। এটা শুধু খিয়ানতই নয় বরং মিথ্যা অপবাদ।

মাওলানা সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে আরও একটি প্রচার হয়েছে যে, তিনি আলেমদের ব্যাপারে বলেছেন যে, তারা যদি এলেম ও কুরআনের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করেন তাহলে ফাহেশা মহিলারা তাদের আগেই জান্নাতে চলে যাবে। প্রথমে এই প্রচারটি শুনিঃ

“উলামারা বেতন নিয়ে যদি কাজ করে, তো এটা গলদ কাজ, এটা দুনিয়াদারি এবং তারা আগে বেহেশতে যেতে পারবে না, তাদের আগে দেহ ব্যবসায়ীরা, বেশ্যারা আগে বেহেশতে যাবে। বলেন নাউযুবিল্লাহ।”

এখন আমরা মাওলানা সাদ সাহেবের বয়ান শুনিঃ

“মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, হে এলেম শিখানেওয়ালারা আর হে কোরআন শিখানেওয়ালারা, এই কোরআনের তালিমের উপর আর এলেম শিখানোর উপর বিনিময় ও বেতন নিও না। অন্যথায়, কামিনে লোক (ইতর লোকেরা) তোমাদের আগে জান্নাতে চলে যাবে। আর কথা সেটাই, যে হযরতগন এলেম শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিনিময় নেয় সেটা তালিমের বিনিময় নয় বরং সময়ের বিনিময়।”

এখানে লক্ষনীয় যে, মাওলানা সাদ সাহেব যে শব্দ ব্যবহার করেছেন সেটা হল “কামিনে লোক” বা ইতর লোকেরা। অথচ যখন তার বিরুদ্ধে উক্ত কথা প্রচার হলো তখন এই শব্দকে বাদ দিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, শ্রুতিকটু ও অশোভনীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রচার করা হয়েছে যে, মাওলানা সাদ এই শব্দগুলোই বলেছেন।

তিনি যে শব্দগুলো বলেছেন সে শব্দগুলো হুবহু ব্যবহার করাই ছিল আমানতদারীর দাবি। কিন্তু এখানে তাকে সাধারণ মানুষের কাছে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য প্রকৃত শব্দের পরিবর্তে শ্রুতিকটু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এই প্রচারটা হচ্ছে একটা খিয়ানত।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মাওলানা সাদ সাহেব উক্ত কথাটির পরের লাইনেই বলেছেন যে, যে হযরতগণ এলেম শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিনিময় নেয় সেটা তালিমের বিনিময় নয় বরং সময়ের বিনিময়। এই লাইন থেকে বুঝা যায় যে, মাওলানা সাদ সাহেব আলেমদের বেতন নেওয়াকে জায়েজ বলেছেন। জায়েজ বুঝাতেই তিনি বলেছেন যে, এটা সময়ের বিনিময়।

অথচ যখন তার বিরুদ্ধে উক্ত কথাটি প্রচার করা হলো, তখন তার পরের লাইন গোপন রাখা হলো। শুধু উক্ত কথাই প্রচার করা হলো। কারণ পরের লাইন বলে ফেললেই মানুষ বুঝে ফেলবে যে, মাওলানা সাদ সাহেব আলেমদের বেতন নেওয়াকে জায়েজ বলেছেন। যে কারণে এ কথাটিকে গোপন রাখা হলো। এখান থেকে বোঝা যায়, এটা হচ্ছে আরেকটা খিয়ানত।
এখন আমরা মাওলানা সাদের উক্ত কথাটির তাহকিক জেনে নেইঃ

দারুল কিতাব প্রকাশনীর বাংলা “হায়াতুস সাহাবা” কিতাবের চতুর্থ খন্ড ৬০২ নম্বর পৃষ্ঠায় আমরা দেখতে পাই যে,

“হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন –
হে এলেম ও কুরআনের বাহকগন, তোমরা এলেম ও কোরআনের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করিও না, অন্যথায় যেনাকারগণ তোমাদের পূর্বে জান্নাতে চলে যাবে।”

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, উক্ত কথাটি হায়াতুস সাহাবা কিতাবে আছে আর এই কিতাবটির লেখক হচ্ছেন হযরত মাওলানা ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। এর বাংলা অনুবাদ করেছেন হযরত হাফেজ মাওলানা জুবায়ের সাহেব।


অথচ যখন উক্ত কথাটি মাওলানা সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে প্রচার করা হলো, তখন কথাটি যে হায়াতুস সাহাবাতে আছে তা গোপন রাখা হলো। কারণ হায়াতুস সাহাবা কিতাবটি দাওয়াত ও তাবলীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কিতাব। যদি এটা প্রকাশ করা হয় তখন সবাই এটাই ভাববে যে, তাবলীগের গুরুত্বপূর্ণ কিতাব হায়াতুস সাহাবা থেকে মাওলানা সাদ বলেছেন, তাহলে আর সমস্যা কি?

ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এই কথাটি এই কিতাবে এনেছেন সেটাও গোপন রাখা হলো। কারণ এটা প্রকাশ করা হলে সবাই ভাববে, ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক বড় আলেম। তাই তিনি যদি এই কথাটি তাঁর কিতাবে আনতে পারেন, তাহলে মাওলানা সাদ সাহেব উক্ত কথা বললে সমস্যা কি?

তেমনিভাবে এই কথাটি যে মাওলানা জুবায়ের সাহেব বাংলা অনুবাদ করেছেন আর সেই অনুবাদকৃত বাংলা হায়াতুস সাহাবা কিতাব শুধু বাংলাদেশই নয় বরং পুরো পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ পড়ছে- এটাও গোপন রাখা হলো। কারণ, এটা বলে ফেললে সবাই ভাববে, মাওলানা জুবায়ের সাহেব বাংলা অনুবাদকরার কারণে যদি সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ এই কথাটি পড়তে পারে, তাহলে মাওলানা সাদ এই কথাটি বললে সমস্যা কি? তাই সব কিছু গোপন রাখা হলো, যাতে শুধু মাওলানা সাদকে সাধারণের চোখে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।

কোন কথা যখন কারো বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়, তখন যদি সেখানে আমানতদারী থাকে, তখন কথাটি খোলাসা করে প্রচার করা হয়। সেই হিসেবে, এই প্রচারটি আমানতদারী হত যদি বলা হতো যে, উক্ত কথাটি হায়াতুস সাহাবাতে আছে, কথাটি ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এই কিতাবে এনেছেন, কথাটির বাংলা অনুবাদ করেছেন মাওলানা জুবায়ের সাহেব আর মাওলানা সাদ সাহেবও উক্ত কথাটি তাঁর বয়ানে বলেছেন।

কিন্তু যদি উদ্দেশ্য “আমানতদারী” না হয়ে কোন ব্যক্তির ইজ্জত সাধারণ মানুষের নিকট নষ্ট করাই উদ্দেশ্য হয়, তখন কথাটি কোন কিতাবে আছে, কে কিতাবটি লিখেছেন, আর কে বাংলা অনুবাদ করেছেন- সব লুকিয়ে শুধু ঐ একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথাটি প্রচার করা হয়। যেমন কিনা আমরা এই প্রচারণার মধ্যে প্রমাণ পেয়েছি।

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, উক্ত কথাটি মাওলানা সাদ সাহেবের ইজ্জত নষ্ট করার জন্যই প্রচার করা হয়েছে এবং এতে নিঃসন্দেহে খেয়ানত করা হয়েছে।

এখন আমরা জেনে নেই মাওলানা সাদ সাহেব হায়াতুস সাহাবা কিতাব থেকে উক্ত কথা কি কারণে বললেন।

আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পেলাম যে, মাওলানা সাদ সাহেব আলেমদের জন্য বেতন নেওয়াকে জায়েজ বলেছেন। তবে তিনি বলেছেন যে, এই বেতনকে কেউ যেন সরাসরি কুরআনের তালিমের বিনিময় মনে না করে বরং এই বেতনকে সময় দেওয়ার বিনিময় মনে করে। এই কথা বোঝাতেই তিনি হায়াতুস সাহাবা থেকে উক্ত কথা বলেছেন যাতে কেউ এই বেতনকে সরাসরি কোরআনের তালিমের বিনিময় মনে না করে।


মাওলানা সাদ সাহেবের এই কথার সমর্থনে কোরআন ও হাদিসে অনেক দলিল রয়েছে। এখন আমরা সেখান থেকে কিছু দলিল দেখি।

মুফতি মনসুরুল হক সাহেবের লিখিত “আহকামে মাসাজিদ ও ইমামদের যিম্মাদারী” কিতাবের ২২ নং পৃষ্ঠায় আমরা দেখতে পাইঃ

মুফতি মনসুরুল হক সাহেবের লিখিত “আহকামে মাসাজিদ ও ইমামদের যিম্মাদারী” কিতাব: 👉 https://tinyurl.com/ahkam-masjid-imam

বিনিময় নিয়ে মসজিদের মধ্যে বাচ্চাদের ও অন্যদের তালিম দেওয়া মাকরুহ ও নাজায়িয। আজকাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা হচ্ছে। এজন্য ইমাম মুয়াজ্জিন বা খাদেমগণ মসলিজদের তালিম আল্লাহর ওয়াস্তে দিবে। অপরদিকে মসজিদ কমিটি তাদের জন্য সম্মানজনক বেতনের ব্যবস্থা করবে। যাতে তারা এ নাজায়িয বেতনের মুখাপেক্ষী না থাকেন। এতে আলেমদের মর্যাদাহানী হয়। এ থেকে পরহেয করা কর্তব্য।”

এখন আমরা “ফাজায়েলে আমল” কিতাবের ২৮১ ও ২৮২ নং পৃষ্ঠার দলিল দেখিঃ

“হযরত উবাই ইবনে কাব রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে কোরআন শরীফের একটি সূরা পড়াইয়াছিলাম। সে হাদিয়া হিসেবে আমাকে একটি ধনুক দিল। আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উহার আলোচনা করলে তিনি এরশাদ করিলেন, তুমি জাহান্নামের একটি ধনুক লইয়াছ। হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুও তাঁর নিজের সম্পর্কে অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই জাওয়াব নকল করিয়াছেন যে, তুমি জাহান্নামের একটি স্ফুলিঙ্গ আপন কাঁধের মাঝখানে লটকাইয়া দিয়াছ। অন্য রেওয়াতে আছে, তুমি যদি জাহান্নামের একটি বেড়ি গলায় পড়িতে চাও তবে উহা কবুল করো।”

এখন আমরা “ফাজায়েলে আমল” কিতাবের ২৮১ নং পৃষ্ঠার দলিল দেখিঃ

“মাশায়েখগণ হইতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এলেমের দ্বারা দুনিয়া উপার্জন করে তার উদাহরণ হইল, নিজের মুখমন্ডল দ্বারা জুতা পরিষ্কার করে। ইহাতে সন্দেহ নাই যে, জুতা তো পরিষ্কার হইয়া যাইবে কিন্তু মুখমন্ডল দ্বারা উহা পরিষ্কার করা চরম নির্বুদ্ধিতা ও আহাম্মকী।”

এখন আমরা “ফাজায়েলে আমল” কিতাবের ২৮২ নং পৃষ্ঠার দলিল দেখিঃ

“এখানে পৌছিয়া আমি ঐ সকল হাফেজদের খেদমতে অত্যন্ত আদবের সহিত আরজ করিতে চাই, যাহারা পয়সা কামানোর উদ্দেশ্যেই মক্তবে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়া থাকেন, আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেদের পদমর্যাদা ও জিম্মাদারীর প্রতি একটু লক্ষ্য করুন। যাহারা আপনাদের বদনিয়তের কারণে কালামে মজীদ পড়ানো বা হেফজ করানো বন্ধ করিয়া দেয় উহার আজাবে শুধু তাহারাই গ্রেফতার হইবে না বরং আপনাদেরকেও উহার জন্য জবাবদিহি করিতে হইবে এবং আপনারাও কুরআনে পাক পড়া বন্ধ করনেওয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত হইবেন। আপনারা মনে করেন যে, আমরা কুরআন প্রচার করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরাই উহার প্রচারের পথে প্রতিবন্ধক। আমাদের বদস্বভাব ও বদ নিয়তি দুনিয়াকে কোরআনে পাক ছাড়িয়া দিতে বাধ্য করিতেছে। ওলামায়ে কেরাম তালিমের বিনিময়ে বেতন নেওয়াকে এই জন্য জায়েয বলেন নাই যে, আমরা উহাকেই উদ্দেশ্য বানাইয়া নিব। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের আসল উদ্দেশ্য শুধু তালিম এবং কোরআনী এলেমের প্রচার-প্রসার। বেতন উহার বদলা নয় বরং জরুরত মিটানোর একটি উপায় মাত্র, যাহা একান্ত বাধ্য হইয়া এবং অপরাগতার কারণেই এখতিয়ার করা হইয়াছে।”

এখন আমরা “তাফসীরে মারেফুল কোরআন” কিতাবের প্রথম খন্ডের ১৯২ নং পৃষ্ঠার দলিল দেখিঃ

“কোরআন শিক্ষা দিয়ে বিনিময় বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয কিনা- এ সম্পর্কে ফিকাহশাস্ত্রবিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম মালিক ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি জায়েয বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ কয়েকজন ইমাম তা নিষেধ করেছেন। কেননা রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআনকে জীবিকা অর্জনের মাধ্যমে পরিণত করতে বারণ করেছেন। অবশ্য পরবর্তী হানাফী ইমামগণ বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে, পূর্বে কুরআনের শিক্ষকমন্ডলীর জীবন যাপনের ব্যয়ভার ইসলামী বায়তুল মাল (ইসলামী ধনভান্ডার) গ্রহণ করত। কিন্তু বর্তমানে ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে শিক্ষকমন্ডলী কিছুই লাভ করেন না। ফলে যদি তাঁরা জীবিকার অন্বেষণে চাকরি-বাকরি ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করেন তবে ছেলেমেয়েদের কোরআন শিক্ষার ধারা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কোরআন শিক্ষার বিনিময়ে প্রয়োজনানুপাতে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েজ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।”

এখন আমরা “তাফসীরে মারেফুল কোরআন” কিতাবের ষষ্ঠ খন্ডের ৫২৮ নং পৃষ্ঠার দলিল দেখিঃ

“এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, শিক্ষাদান ও প্রচারকার্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা দুরস্ত নয়। তাই পূর্ববর্তী মনীষীগণ একে হারাম বলেছেন। কিন্তু পরবর্তীগণ অপারগ অবস্থায় একে জায়েয সাব্যস্ত করেছেন।”

যারা উপরের সম্পূর্ণ বিষয়টি ভিডিও আকারে দেখতে চান তারা নিচের ভিডিওটি ক্লিক করুন

নতুন নতুন তাহকিক পেতে ক্লিক করুন আমাদের ইউটিউব এবং ফেসবুক পেইজেঃ

Follow Us:

🌐 Web: https://tahqiq.online/
👍 Facebook Page: https://www.facebook.com/tahqiq.online
📺 YouTube Channel: https://www.youtube.com/@tahqiq.online
🔗 Telegram Channel: t.me/tahqiqOnline
Show More

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button